রোববার সকাল সাড়ে ১০টা। কুমিল্লা নগরীর ফৌজদারি এলাকা। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পশ্চিম পাশের ফটকের কাছে নিম্ন আয়ের মানুষের দীর্ঘ লাইন। এখানে আসবে নিত্যপণ্যের গাড়ি।
বাজারে নিত্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে তরকারির বাজার। তাই যেখানে একটু সাশ্রয়ে দামে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির খবর পান নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সেখানেই ছুটে যান।
ভ্যানচালক আবদুর রহিম সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অপেক্ষা করছেন। নিত্যপণ্যের গাড়ীর আসবে। তার মতো আরো অন্তত তিনশ নিম্ন আয়ের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
আবদুর রহিম বলেন, ‘ভ্যান চালাই। প্রতিদিন ভাড়া হয় না। ঘরে বউ-বাচ্চা মিলায়ে ৬ জন আছে। বাজারে তরকারি, তেল, ডাল পেঁয়াজের দাম বেশি। তাই কম দামে কিনতে এখানে আসছি।’
বেলা সাড়ে ১২টা। জেলা পরিষদের সামনে টিসিবির গাড়ি এল। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে অপেক্ষমান সবাই চলে এলেন জেলা পরিষদের সামনে। হৈ-হুল্লোড় বেড়ে গেল। কার আগে কে কিনবেন তা নিয়ে লাইনে দাঁড়ানো লোকজন একজন আরেকজনের সাথে ঠেলাঠেলি শুরু করলেন। দু একজন বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে টিসিবির লোকজন ধমক দিয়ে তাদের থামিয়ে দেন।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২ কেজি তেল, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি চিনি কিনেছেন আবদুর রহিম। পেশায় রিকশাচালক আবদুর রহিম বলেন,‘দুই ঘন্টা দাঁড়াইলেও কম দামে কিনতে পারতেছি৷ এতেই আমি খুশি।’
গৃহবধূ সাজিয়া আক্তার থাকেন নগরীর ঝাউতলা এলাকায়। টিসিবির গাড়ি থেকে ৫০ টাকায় এক কেজি ডাল ১৬০ টাকায় দুই লিটার তেল ও ৩০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন। তার স্বামী ওবায়েদ মিয়া ফেরি করে জিনিস বিক্রি করেন।
সাজিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ায় আছি। কিছু করারও নেই। বাজারে দাম আরো বেশি। টিসিবি থেকে প্রতি কেজি ডালে ১৫ টাকা আর তেলে ৩০ টাকা বাঁচে। তাই সময় নিয়ে লাইনে দাঁড়ায় থেকে এগুলো কিনছি।’
নিত্যপণ্যের ডিলার মেসার্স হাসি এন্টারপ্রাইজ নগরীর ফৌজদারি এলাকায় প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮০ টাকা, পেয়াজ ৩০ টাকা, ডাল ৫০ টাকায় বিক্রি করে।
নগরীর রাজগঞ্জ ও নিউমার্কেটে প্রতি লিটার তেল ১১৫ টাকা, দেশি পেয়াজ ৮০ টাকা ও বিদেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, ডাল ৭৫ ও চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিম্ন আয়ের মানুষজন গড়ে প্রতি কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাঁচাতে তাই লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন।
গৃহবধূ আসমা বলেন,‘একটু দাঁড়াইলে ৮০ টাকা বাঁচনো যায়। আমাদের মতো গরিব মানুষের জন্য ৮০ টাকা অনেক টাকা। তাই লাইনে দাঁড়াই।’
টিসিবির পণ্য বিক্রির নির্দিষ্ট সময় নেই কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে টিসিবির কুমিল্লার কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের ১১৮ জন ডিলার রয়েছেন। আমরা উপজেলার ডিলারদের আগে পণ্য দিই। তারপর সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার ডিলারদের দিই। যারা টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কেনেন তাদের সবাইকে দিনের ১২টায় আসার জন্য বলা হয়। আসলে মানুষের অভাবের কারণে মানুষ কম দামে পণ্য কিনতে সকাল থেকে লাইনে এসে দাঁড়ায়।